গত ২ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এর উদ্যোগে একটি সাংগঠনিক সংহতি এবং জরুরী মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ এবং বিচারের পক্ষের সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি এবং নেতৃবৃন্দ পর্যায়ের এই সভায় – চলমান পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে মামলাগুলোর সর্বশেষ আপডেট, এবং রায় পরবর্তী নাগরিক সমাজের করণীয় পদক্ষেপসমূহের ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আইসিএসএফ সদস্য সৈকত আচার্য্যের সঞ্চালনায়, এবং রায়হান রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংহতি সভার শুরুতেই আইসিএসএফ এর উদ্যোগে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারী তারিখে লন্ডনের ব্র্যাডি সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য “সংহতি ও রূপরেখা সম্মেলন” এর ঘোষণা দেয়া হয় এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যত কর্মকান্ডের এবং অবস্থানের রূপরেখা বিষয়ে সভায় উপস্থিত সকলের মতামত এবং পরামর্শ আহ্বান করা হয়। সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দের সক্রিয় উপস্থিতি এবং মত বিনিময়ে তিন ঘন্টা ব্যাপী প্রাণবন্ত এক আলোচনায় জরুরী বিভিন্ন বিষয়ে বক্তারা আলোকপাত করেন।
আইসিএসএফ আয়োজিত উক্ত সংহতি সভায় নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করে সভার সকলের সাথে মত বিনিময় করেন: ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নূর মনি এবং সদস্য জিয়াউদ্দিন লালা; ১৯৭১ এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির (যুক্তরাজ্য) যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জামাল আহমদ খান এবং একই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল মালিক, এবং অপর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সানু মিয়া; প্রজন্ম-‘৭১ নেতৃবৃন্দ আহমেদ নুরুল টিপু, বাবুল হোসেন (আহ্বায়ক), শেখ দবির (সহ-সভাপতি) এবং শেখ ফরিদ (সহ-সভাপতি); যুদ্ধাপরাধ বিচার মঞ্চ যুক্তরাজ্য সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান; নারী চেতনার সভাপতি সৈয়দা নাজনীন সুলতানা (শিখা); সাপোর্ট বাংলাদেশ এর সংগঠক কমরেড মসুদ আহমেদ; ফ্রেন্ডস অব ছাত্র ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক গোলাম আকবর মুক্তা; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট মুজিবল হক মনি; কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ এনাম; ইষ্ট লন্ডন আওয়ামী লীগ সদস্য মজুমদার মিয়া, আওয়ামী যুব লীগ সদস্য সাদিফুজ্জামান চৌধুরী; বেতার বাংলার পক্ষ থেকে আব্দুর রহমান অলি প্রমূখ। এছাড়াও সংহতি সভার উদ্যোগের সাথে একাত্নতা জানিয়েছেন – লন্ডন বাংলা উইমেন্স নেটওয়ার্কের সভানেত্রী মিনা রহমান, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রধান এবং সাবেক ডাকসু সদস্য মাসুদ রানা, প্রবাসী পেশাজীবি পরিষদের সংগঠক এডভোকেট হাফিজুর রহমান মিনার এবং আওয়ামী আইনজীবি পরিষদের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার সওগাতুল আনোয়ার খান এবং সাধারণ সম্পাদক অনুকুল তালুকদার ডাল্টন। যুক্তরাজ্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা এবং ভাইস চেয়ারম্যান ইসহাক কাজল, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব সুলতান শরীফ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক। এটিএন বাংলা, চ্যানেল নাইন ইউকে, এনটিভি, এবং চ্যানেল আই-সহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিরাও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বলেন যে জামাত-শিবির চক্র ‘৭১ এ বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পাক-বাহিনীর দোসর হিসেবে মানুষ হত্যা করেছিল সেই যুদ্ধাপরাধীদের দল আজকে যখন বিচার শুরু হয়েছে, তখন তারা ট্রাইবুনালের বিরোধিতা করছে। তারা এতদিন বলেছে, ট্রাইবুনাল ঠিক আছে কিন্ত বিচার ঠিক নাই। এখন তারা বলছে,গোটা ট্রাইবুনালই নাকি অবৈধ এবং এটাকে নাকি ভেংগে ফেলতে হবে। এসবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বক্তারা বলেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বই স্বীকার করেনি এবং যাদের নেতা গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে “পূর্ব পাকিস্তান পূনরুদ্ধারের” জন্য বিদেশে কমিটি এবং লবিয়িং করে এদেশের বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচার চালিয়েছিল তারাই আজকে এই ট্রাইবুনাল বন্ধ করে দেয়ার জন্য সারাদেশে নারকীয় তান্ডব এবং শ্বেত সন্ত্রাস চালাচ্ছে। বক্তারা আরো বলেন, এই মৌলবাদী এবং যুদ্ধাপরাধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রবাসী বাংগালীদের একজোট হয়ে এই বিচার প্রক্রিয়া এবং ট্রাইবুনালের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। বক্তারা আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারী অনুষ্টিতব্য আইসিএসএফ এর “সংহতি ও রূপরেখা সম্মেলন” এর প্রতি একাত্নতা প্রকাশ করে এই সম্মেলনকে সফল করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সভায় উপস্থিত সকলে যে বিষয়গুলোতে আলোচনার মাধ্যমে একাত্ম হন সেগুলো হল – সংকীর্ণ গোষ্ঠী বিভেদ এবং বিভাজন ভুলে ১৯৭১ এর সকল পক্ষ সংগঠনগুলোর এক সাথে একই লক্ষ্যে কাজ করবার প্রয়োজনীয়তা, সংগঠনগুলোর মধ্যে কর্মূসূচীর সমন্বয় এবং নিয়মিত যোগাযোগ বৃদ্ধি, নিজেদের মধ্যে আয়োজিত আভ্যন্তরীণ পাঠচক্র এবং কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বিচার সংক্রান্ত মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে সকলের অবগত থাকার প্রয়োজনীয়তা, মিডিয়ায় এবং সকল আন্তর্জাতিক মহলে বিচার এবং ১৯৭১ এর পক্ষে সঠিকভাবে যুক্তিসহকারে বক্তব্য তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা, নতুন প্রজন্মকে ১৯৭১ এর ইতিহাস এবং অপরাধীদের ভূমিকা বিষয়ে সঠিকভাবে অবগত করার এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডে তাদের আরও সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা, ১৯৭১ এর বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার প্রয়োজনীয়তা, বাংলাদেশের চলমান বিচারকে বিশ্বের দরবারে এবং আগামী প্রজন্মের কাছে সঠিক আলোকে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা, বিচার এবং এর ভাবমূর্তি উন্নয়নের ব্যাপারে নাগরিক সমাজের নিজ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি।
সংহতি ও ঐক্যমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে আয়োজিত এই মত বিনিময় সভার আয়োজক সংগঠন আইসিএসএফ এর জোটভুক্ত ১৩-সংগঠন হল বাংলাদেশ সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ, সচলায়তন, আমারব্লগ, মুক্তাঙ্গন ব্লগ, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, ই-বাংলাদেশ, নাগরিক ব্লগ, জেনোসাইড বাংলাদেশ আর্কাইভ, মুক্তমনা ব্লগ, আমরাবন্ধু ব্লগ, লন্ডন লইয়ার্স ফোরাম, নিউজ বাংলা, এবং রেডিও হৈচৈ। ১৯৭১ এর সকল শহীদ এবং নির্যাতিতদের বিচারের দাবীর পক্ষে ২০০৯ সাল এর শুরু থেকে সক্রিয় এই জোট বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান বিচার প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, কারিগরি সাহায্য প্রদানসহ দেশে এবং বিদেশে একে সঠিকভাবে তুলে ধরার কাজে নিয়োজিত।