প্রজন্ম সংলাপের এই পর্বে আলোকপাত করা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় – বাংলাদেশের ইতিহাস – মূলত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিকৃত উপস্থাপনা। যদিও সাবেক মন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধের সহ প্রধান সেনাপতি এ কে খন্দকারের লিখিত সাম্প্রতিক বই ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ নিয়ে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ, হতাশা আর বিশ্ময় দেখা দিয়েছে, ইতিহাসের এই বিকৃতি, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত বা হেয় করবার এই প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে দুই প্রজন্মের দুই শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং রাজনৈতিক ভাষ্যকারের সাথে।

প্রজন্ম সংলাপ: পর্ব ১: খন্ড-১

প্রজন্ম সংলাপ: পর্ব ১: খন্ড-২

প্রজন্ম সংলাপ: পর্ব ১: খন্ড-৩

প্রজন্ম সংলাপ: কি ও কেন?

“প্রজন্ম সংলাপ” – আইসিএসএফ (International Crimes Strategy Forum) এর এই উদ্যোগ প্রজন্মের শ্বাস্বত সত্যান্বেষণের প্রচেষ্টাকে কন্ঠস্বর দেয়ার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। আইসিএসএফ এর এই “প্রজন্ম সংলাপ”-এ তুলে ধরা হবে ১৯৭১ এর কথা, চলমান বিভিন্ন ঘটনাবলীর কথা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ঐতিহাসিক সংগ্রামের কথা, যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের কথা, দেশ আর বহির্বিশ্বের কথা, ত্যাগের কথা, ষড়যন্ত্রের কথা, আর সে সব রুখে দেয়া তরুণ প্রজন্মের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবক, একটিভিস্ট, গবেষক, সংগঠকদের কাছ থেকে আমরা সেই কথাগুলোই সবাই মিলে শুনবো, যে কথাগুলো নানান সমীকরণ আর দলাদলিতে আমাদের আর শোনা হয়ে ওঠে না। আইসিএসএফ-এর এই উদ্যোগ প্রজন্মের কন্ঠস্বরকে, প্রজন্মের চিন্তাভাবনাকে, প্রজন্মের জিজ্ঞাসাকে পৌঁছে দিবে গণমানুষের কাছে।
আইসিএসএফ ৭১-এর আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার এবং ১৯৭১ এরএর ভিক্টিমদের পক্ষে বিশেষজ্ঞ এবং এক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। আমরা মনে করি – মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য ১৯৭১ সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধারপরাধ, ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের কোন বিকল্প নেই। একই সাথে এই বিচারকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজন সৃজনশীল গবেষণা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সংলাপ এবং আলোচনার। এর পথ ধরেই আইসিএসএফ-এর আয়োজন এই “প্রজন্ম সংলাপ”।

আলোচনায় অংশ নিয়েছেন:
অধ্যাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন
(সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এবং অধ্যাপক, প্রাণ রসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
ড. নাদির জুনাইদ
(সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)

ইন্টারভিউ:
নজরুল ইসলাম (ব্লগার, ঢাকা থেকে)

সঞ্চালনায়:
ড. বিদিত লাল দে
(প্রভাষক, ব্রুনেল বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য)

গ্রন্থনা ও গবেষণা: অদিতি দে, মাহবুব আজাদ, ইশতিয়াক রউফ, আরমান রশিদ, আশফাক আনুপ, ড. বিদিত লাল দে
ভিডিও সম্পাদনা: ঋজুতা শারমীন অদিতী
গ্রাফিক্স: স্যাম
আবহ সঙ্গীত (কৃতজ্ঞতা): ‘Dark Justice’ (কম্পোজ করেছেন – Grégoire Lourme)
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন, ড. রায়হান রশিদ
প্রযোজনা: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আই সি এস এফ)

তিন খন্ডের এই আলোচনা থেকে কিছু চুম্বক অংশ

“ইতিহাস রচনার জন্যে, হ্যা ঠিক, যে ইতিহাসের সঙ্গে যারা যুক্ত যেমন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের, তারা কথা বলবেন, তারা তাদের স্মৃতি লিখে রাখবেন এবং যারা বিশ্লেষণ করতে পারেন করবেন। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু এই সব কিছুই কারা করবেন? যারা শিক্ষিত জনেরা যারা সচেতন মানুষেরা, নাদির জুনায়েদের মত মানুষেরা, কিংবা যদি আমাকেও বলেন আমিও কিছু লেখাপড়া করেছি, আমরা। কিন্তু আমাদের বাইরে কিন্তু একটা বিশাল বিশাল জনগোষ্ঠী আছে। যাদেরকে বোঝাতে একটা পরিভাষাও আছে – সাব আল্টার্ন। সেই সাব আল্টার্নদের ইতিহাস সেটাও আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এবং এটা ভেবে দেখুন বিশ বছরের যে যুবক কিংবা নারী যারা সেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলো তারা কিন্তু এখন ষাটোর্ধ। আর কতো বছর? দশ বছর? নাহলে পনেরো বছর? তারপরে কিন্তু তাদেরকেও আমরা হারিয়ে ফেলবো। আমি নতুন প্রজন্মকে আহ্বান করি তোমরা শুধু আমাদের মত মানুষের কাছে তোমরা যেও না, তাদের কাছে তোমরা যাও, তাদের কথা শোনো, কিন্তু গুরুত্বের সাথে সে কথা বিবেচনা করো যে যারা এই নয়টি মাস মুক্তিযোদ্ধাদের আহার দিয়েছে আশ্রয় দিয়েছে পথ দেখিয়ে দিয়েছে এবং যারা চরম আত্মত্যাগ মেনে নিয়েছে, যাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিলো না, যারা নিরস্ত্র ছিল এবং নিরস্ত্র থেকেই তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সব কিছু দেখেছে, তারা এখন যারা বেঁচে আছে এবং ভুলে যায়নি সবকিছু, তোমরা তাদের কাছে যাও এবং তাদের কাছে ইতিহাস শোনো।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“আমাদের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা এদের পরাজিত করতে পারবো। একাত্তরে পরাজিত করেছি। আমরা এই দীর্ঘ দুই যুগ ধরে তাদের শাসনের অবসান ঘটিয়েছি এবং সামনেও আমরা তাদের পরাজিত করবোই।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“মুক্তিযুদ্ধকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দেয়া অন্ধকারে ঠেলে দেয়া এবং সেটা লম্বা সময়ের জন্যে, দুই যুগের অধিক সময়ের জন্যে। সেটার ফলাফল হয়েছে কিন্তু ভয়াবহ। আমাদের বেশ কয়েকটা প্রজন্ম যারা বড় হয়েছে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এবং যারা সেই ইতিহাস, ইতিহাস নয় বিকৃত ইতিহাস শুনেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনতে পারেনি। এবং তাদের যে ভাব জগত মানস জগত গড়ে উঠেছে সেটা হয়েছে সেই পরিবেশে। সুতরাং আজকে যখন সে কথা আপনারা তুলছেন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটি জানুক নতুন প্রজন্ম, তখন কিন্তু সে কথা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“যখন বানের জল আসে তখন তো কচুরিপানাও আসে। কিন্তু বানের জল কিন্তু অনেক জঞ্জালকে ধুয়ে মুছে সামনে নিয়ে যায়, এটাও সত্য। আর যে আবর্জনা জমেছে যেটা অনেকটা আজিয়ান স্টেবল, আমরা বলি যে সেই আজিয়ানের সমস্ত ত্রুটি দুর্গন্ধময় যে আবর্জনা সেটাকে সরাতে একটু সময় লাগবে কিন্তু যেহেতু গণজাগরণ হয়েছে সে জন্য আমি খুবই আশাবাদী যে আমাদের নতুন প্রজন্ম, তাদেরকে যেভাবেই হোক না কেনো বিভ্রান্ত তাদের করা যাবে না। আমাদের সেটা প্রয়োজন, আপনারা যেই কাজটি করছেন। এরকম কাজে আরো উদ্যোগ দরকার।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“বলা হয়েছিলো যে মেহেরজান ছবিটি, ইট ওয়ান্টেড টু হিইল দা উন্ডস অফ দা পিইপল হু সাফার্ড ইন নাইন্টিন সেভেন্টি ওয়ান। কিন্তু এই যে মুক্তিযোদ্ধাদের এই যে রেপ্রেসেন্টেশন, এই রেপ্রেসেন্টেশনটা কার সেই মনের যে কষ্ট সে ক্ষত সেটা দূর করবে? মুক্তিযোদ্ধারা যখন এই ছবি দেখবেন, তাঁরা যে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন, যতো ত্যাগ-তিতিক্ষা থেকে সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছেন এই ছবি দেখে তো তাঁরা মেলাতে পারবেন না, বা আমরাও মেলাতে পারবো না। এটা ডিস্টর্শন।”
– নাদির জুনাইদ

“গণজাগরণ কিন্তু, এটা বিশাল ব্যাপার। গণজাগরণের মধ্যে আমরা, আমি বলবো, যে বেশীরভাগ যারা গণজাগরণের মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থেই যারা জেগে উঠেছে তাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় কিন্তু এখনো হয়নি। গণজাগরণ শুধুমাত্র তরুন, আমি কথার কথা বলছি কাউকে হেয় করার, শুধু ইমরান সরকার কিংবা অন্য কেউ, কয়েকজন ব্লগার, তারা কিন্তু, তারা তো আছেন, তারা মুখপাত্র হয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই হয়তো হয়েছেন। কিন্তু তারাই শুধু গণজাগরণ নয়। গণজাগরণের সাথে যুক্ত হয়েছে বহু মানুষ। সারা বাংলাদেশ শুধু নয়, বাংলাদেশের বাইরেও যাদেরকে আমরা চিনি না কিন্তু তারা কাজ করছেন এবং সেই কথাগুলো তারা গবেষণা করছেন, সেগুলো আমরা দেখতে পাবো।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“আমাদের যে বিভিন্ন পর্যায়ে সেই প্রাইমারী স্কুল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের যে শিক্ষায়তনগুলো ছিল এবং আমাদের যে পাঠ্যসূচি ছিল, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সেগুলো মুছে দেয়া হয়েছিলো এবং সেখানে একেবারেই বলা যায় যে বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যাচারের ইতিহাস আমরা দেখেছি।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“আমার কাছে নিজের কাছে স্পষ্ট না যে কেনো তারা ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে আরো জোরালো ভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে না। কারণ বামপন্থী দল হিসেবে প্রগতিশীল দল হিসেবে তাদের কাছ থেকে আরো জোরালো বক্তব্যই আমরা আশা করি। কিন্তু এটা হয়তো মোটামুটি আমাদের কাছে স্পষ্ট যে আরো জোরালো ভূমিকা আমরা দেখতে পেতাম, দেখতে পাওয়া উচিৎ ছিলো বামপন্থীদের কাছ থেকে।”
– নাদির জুনাইদ

“সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, তাদের যে বীরত্ব, তাদের আত্মত্যাগ এবং সেখানে রাজনীতিবিদদেরও নেতৃত্ব। এটা ঠিক যে আমাদের বাঙ্গালিরা দীর্ঘ সময় ধরেই যুদ্ধের সঙ্গে পরিচিত ছিলো না এবং দুরেই রাখা হয়েছে, সেই ব্রিটিশরা তারা দূরে রেখেছে, কিন্তু তারপরেও আমাদের যে রাজনীতিবিদরা কোনো নেতৃত্ব দেননি এ কথাটা সম্পূর্ণ রুপে ভ্রান্ত। রাজনীতিবিদরা অবশ্যই নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সারা বাংলাদেশ জুড়েই দিয়েছেন এবং সেই রাজনীতিবিদদের মধ্যে যেমন আওয়ামী লীগও আছে, অন্যান্য বামপন্থী শক্তি এবং বিভিন্ন সামাজিক শক্তি তারা নিশ্চয়ই ছিল।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“এটা (ইতিহাস বিকৃতি) যে সুপরিকল্পিতভাবেই হচ্ছে সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। একটা পর্যায় গিয়েছে যখন তারা ক্ষমতায় ছিলো এবং তখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলো এবং তারা নিজেদের ইতিহাসটাকে বারবার প্রচার করেছে, মিথ্যা ইতিহাস। এখন যখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আরো কয়েকটি দল ক্ষমতায় আছে এবং দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে এবং এক অর্থে অনেকটা দৌরের উপর আছে বলবো, যে জামায়াত-হেফাজত-জঙ্গি তারা দৌড়ের উপর আছে এবং সাথে বিএনপিও আছে। এই সময়টায় যে প্রচারণার যে কৌশলটা আমরা দেখছি, যে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ভেতরেই একটা বিভেদ সৃষ্টির জন্যে তারা খুঁজে বের করছে ঐ সমস্ত মানুষদের। তাদের মধ্যে যেমন মহিউদ্দিনের কথা তো আপনি বলেছেন। আমি এ কে খন্দকারকেও কিন্তু তার বাইরে রাখবো না।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“আমি আমার ক্লাসে গত পাঁচ বছর আগেও আমি দেখেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে ভালো ভালো ছাত্র ছাত্রী যারা, আমরা জানি যে দেশের সবচেয়ে ভালো ছাত্র ছাত্রীরা এখানে আসে ভালো স্কুল কলেজে লেখাপড়া করে। আমি আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও যখন আমার শ্রেণী কক্ষে যেয়ে জিজ্ঞেস করতাম যে ঢাকা শহরে যুদ্ধ করেছে সেই ক্র্যাক প্ল্যাটুনের সদস্যদের নাম তোমরা বলো, অথবা বিখ্যাত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম বলো, আমি দেখতাম যে খুব বেশী নাম তারা বলতে পারছে না। সেটা পাঁচ বছর আগে দেখেছি, এখনো যখন জিজ্ঞেস করছি এখনো বলতে পারছে না। এই যে ব্যাপারগুলো ঘটছে এর জন্য কিন্তু দায়ী, ছেলে মেয়েরা, আজকে এই ইয়াং ছেলে মেয়েরা যতোনা দায়ী তার থেকে অনেক বেশী দায়ী সমাজ, অনেক বেশী দায়ী শিক্ষা ব্যবস্থা, অনেক বেশী দায়ী আমাদের পরিবারগুলো। ভূমিকা আসতে হবে সব জায়গা থেকেই। পরিবার থেকে, স্কুল কলেজ থেকে ইউনিভার্সিটি থেকে এবং শিক্ষকদের থেকে সাংবাদিকদের থেকে, যারা এই চলটার সাথে যুক্ত এই কালচারাল এবং হিস্টোরিকাল ইতিহাস বোধটা যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া বা আমাদের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন।”
– নাদির জুনাইদ

“শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নয়, সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথাই বলছি এগুলি সর্ব ক্ষেত্রেই সত্য, সেখানে যে জামায়াতীকরণ হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে জামায়াতীকরণ করা হয়েছে। শিক্ষকদের মধ্যে যে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং ব্যাপক আকারে। এই যে, এবং সেই শিক্ষকরা তো সেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার প্রশ্নই উঠে না, তারা তাদের সঙ্গে একমত নয়, তারা তাদের বিরুদ্ধেই কথা বলবে নানা ভাবে। কোনো সময় যখন বিপদে পড়বে চুপ করে থাকবে, যখনই তাদের সুসময় আসবে তখন তারা একেবারেই সরাসরি এই স্বপক্ষেই বলবে। তো সে জন্যেই কিন্তু আইনের প্রয়োজন আছে। এবং সে জন্যেই আছে যে একটু এক অর্থে যদি বলেন যে একনায়কত্ব সে একনায়কত্বেরও প্রয়োজন আছে। সে একনায়কত্ব হচ্ছে জনগণের একনায়কত্ব। জনগণের জন্য গণতন্ত্র আর সেই স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে একনায়কত্ব প্রয়োগ করা। এবং সেই একনায়কত্ব প্রয়োগ করবার জন্যই তো আছে আমাদের রাষ্ট্র। আমাদের স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র কি করবে? একটা পরাধীন দেশের রাষ্ট্র আমাদের উপর একনায়কত্ব করে জনগণের উপরে। আমরা তো সেই রাষ্ট্র চাইনি এবং সে রাষ্ট্র ভেঙ্গে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছি। কিন্তু সে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তো একনায়কত্বের অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে এবং সেই অস্ত্রটি হচ্ছে যেমন বিচারের ক্ষেত্রে আইনের ক্ষেত্রে আপনি যেই আইনটির কথা বলছেন সে আইন প্রণয়ন করতে হবে পার্লামেন্টে সে আইন অনুমোদন করতে হবে, যে সেই শিক্ষক যেনো শ্রেণী কক্ষে গিয়ে কখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কোনো কটাক্ষ করতে না পারে এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করতে না পারে। সে আইন থাকতে হবে এবং যদি তারা করে তাহলে তার দণ্ড হবে।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“এই বিষয়গুলো যদি আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার যদি অতিদ্রুত এদিকে নজর না দেন তাহলে কিন্তু এ ধরণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দেখেছেন অল্প কয়েকদিন আগে যে আমাদের যে টেক্সট বুক বোর্ডের যে বইগুলো, সেগুলো হচ্ছে একেবারে সেগুলো অনুমোদিত বই, সেখানে কীভাবে মিথ্যাচার করা হয়েছে বিকৃত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। এবং কারা করেছে? প্রকাশক কে? পাঞ্জেরী। পাঞ্জেরীর একটু ইতিহাস নিয়ে দেখুন। আমার তো ধারণা হয় যে পাঞ্জেরী, এই যে পাব্লিকেশন, এদের অর্থায়ন কারা করছে? এবং আমি যদি ভুল না করে থাকি তাহলে পাঞ্জেরীর পেছনের অর্থায়ন হচ্ছে জামায়াতের এবং আমাদের মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় তিনি সেই পাঞ্জেরীকেই বেশীরভাগ কাজ দিয়েছেন, এবং তাদের, তারা যদিও বলছে যে এটা তাদের ভুল হয়ে গিয়েছে তারা ভুল শুধরে নিবে, ব্যাপারগুলোকে এতো সহজে সাধারণ ভাবে দেখা ঠিক হবে না।”
– মো. আনোয়ার হোসেন

“বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের সমাপ্তি পর্যায়ে ‘জয় বাংলা’ না ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছিলেন, বা ‘জিয়ে পাকিস্তান’ বলেছিলেন, সে বিষয়টি নিয়ে আগেও অনেকে মন্তব্য করেছিলেন এবং কিছু বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রত্যেকেই বিচারপতি হাবিবুর রহমান বা কবি শামসুর রহমান তাঁরা কিন্তু তাদের সেই বক্তব্য থেকে সরে এসেছেন এবং শামসুর রহমান প্রকাশ্যে এ জন্য ভুল স্বীকার করেছেন।”
– বিদিত দে

‘প্রজন্ম সংলাপ’ এর বাকি পর্বগুলো দেখতে হলে এই লিন্কে ক্লিক করুন।