২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১২টি সংগঠন, এবং সংগঠন বহির্ভুত একক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি জোট। জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে – ইংরেজী এবং বাংলা মিলিয়ে বাংলাদেশের ৮ (আট)টি কমিউনিটি ব্লগ, গণহত্যার ওপর একটি প্রধান আর্কাইভ, গণহত্যার ওপর বিশেষায়িত একটি গবেষণানির্ভর সংগঠন, এবং একটি বিশেষায়িত উদ্যোগভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আইসিএসএফ কিছু মৌল নীতি এবং মূল্যবোধ এর ওপর প্রতিষ্ঠিত, যার সরাসরি প্রতিফলন হল আমাদের অনুসৃত স্তরবিহীন সামষ্টিকতার ধারণা এবং অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া/সংস্কৃতি।
প্রায় বছর দেড়েক আগে আইসিএসএফ থেকে বহিষ্কৃত এক সদস্যের অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়া নানাবিধ বিতর্কিত ও সন্দেহজনক তৎপরতা এবং কর্মকান্ডের দায়ভার কিছু কিছু মহল ক্ষেত্রবিশেষে বর্তমানে আইসিএসএফ এর ওপর চাপিয়ে দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছেন, যা ইতোমধ্যে আমাদের নজরে এসেছে। আমরা তারপরও মনে করতে চাই যে, অনেকে হয়তো ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এবং সঠিক তথ্য না জেনেই মূলতঃ এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন কিংবা প্রচারণার শিকার হয়েছেন। তাই আমরা এ সংক্রান্ত সকল বিভ্রান্তির নিরসনকল্পে এবং উক্ত বহিষ্কৃত সদস্যের যাবতীয় বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং অপতৎপরতা থেকে সর্বতোভাবে আইসিএসএফ এর বিযুক্তি জনমনে স্পষ্ট করতে এই আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এর পক্ষ থেকে সকলকে অবগত করা যাচ্ছে যে জনাব গোলাম মারুফ ওরফে নিঝুম মজুমদার ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী থেকে এই সংগঠনের সদস্য নন। উক্ত নিঝুম মজুমদারকে সন্দেহজনক কর্মকান্ডের কারণে আইসিএসএফ এর কোর গ্রুপের সকল সদস্যের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বসম্মতিক্রমে আইসিএসএফ থেকে আজ থেকে দেড় বছর আগেই বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে নিঝুম মজুমদার আইসিএসএফ এর সাথে যোগাযোগ শুরু করেন ২০১১ সালের শেষ দিক থেকে। আইসিএসএফ এর সাথে যুক্ত থাকাকালীন এই ক’মাসে সংগঠনের মূল অবকাঠামোর কোন নির্দিষ্ট টিম বা প্রকল্পের সাথে সেভাবে সরাসরি যুক্ত থেকে ভূমিকা না রাখলেও নিজের লেখালিখির আগ্রহ থেকে তিনি আইসিএসএফ এর নিয়মিত ওয়ার্কশপ এবং সাধারণ সদস্যদের মধ্যে উম্মুক্ত আলোচনাগুলোতে অংশগ্রহণ করতেন আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) আইন ১৯৭৩ এবং বিচারের পক্ষের-বিপক্ষের বিভিন্ন তাত্ত্বিক এবং কৌশলগত বিষয়গুলো জানবার আগ্রহ থেকে। আইসিএসএফ সবসময়ই একটিভিস্টদের এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে খুঁটিনাটি জানাবার এবং বিষয়গুলো নিয়ে লিখবার আগ্রহকে উৎসাহিত করেছে। তবে এটা স্পষ্ট করা প্রয়োজন – আইসিএসএফ এর মূল যে দু’টো আইনগত গবেষণা টিম তাতে অন্তর্ভুক্তির জন্য নিঝুম মজুমদার কখনোই বিবেচিত হননি।
আইসিএসএফ এর কার্য পদ্ধতির সাথে যারা পরিচিত তারা নিশ্চয়ই জানবেন যে, সাংগঠনিক নীতির অংশ হিসেবে আমরা প্রাক্তন কিংবা বহিষ্কৃত সদস্যদের ব্যাপারে মন্তব্য করা বা বিবৃতি প্রদান করা থেকে সাধারণত বিরত থাকি। এ পর্যন্ত এই নীতি আমাদের বর্তমান এবং প্রাক্তন সকল সদস্যের প্রতি সৌজন্যের অংশ হিসেবে, এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের একটিভিজমের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা অনুসরণ করে এসেছি। এই বিবৃতিতেও কেবলমাত্র নিঝুম মজুমদারের বহিষ্কারের ঘটনাটি নিশ্চিত করা ছাড়া সকলের এই সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পেছনের মূল কারণগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করতে আইসিএসএফ এখনো ইচ্ছুক নয়। তবে এ কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ করছি যে আইসিএসএফ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও উপরোক্ত নিঝুম মজুমদার সজ্ঞানে (কিংবা হয়তো ভুলবশত) বিভিন্ন প্লাটফর্মে নিজেকে আইসিএসএফ এর সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন, যা আমাদের বহু সদস্য, শুভানুধ্যায়ী, মিডিয়ার সাথে জড়িত অনেককে এবং সমমনা অন্যান্য সংগঠনগুলোকেও বিভ্রান্ত করছে। এ কারণেও এই বিবৃতি দেয়া।
সম্প্রতি আইসিএসএফ এবং ১৯৭১ এর পক্ষের অন্যান্য সংগঠন এবং ১৯৭১ এর পক্ষের পরীক্ষিত সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্লাটফর্মে অত্যন্ত কদর্য ধরণের মিথ্যাচারসহ সরাসরি মানহানিকর, প্রশ্নবিদ্ধ এবং সন্দেহজনক কিছু অপতৎপরতার প্রমাণাদি আমাদের হস্তগত হয়েছে। আমরা মনে করি আইসিএসএফ, এর সাথে জড়িত ব্লগ প্লাটফর্মগুলো, এবং বিভিন্ন দেশে সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কর্মী-সংগঠকদের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক এই অপতৎপরতাগুলোর উদ্দেশ্য হল ১৯৭১ এর পক্ষ শক্তির সংগঠন এবং পরীক্ষিত নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদের মনে সুপরিকল্পিতভাবে সন্দেহ এবং বিভেদ সৃষ্টি করা। এই বিষয়গুলো নিয়ে যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষে আইসিএসএফ ইতোমধ্যেই বিশদ আইনী পরামর্শ গ্রহণ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। এই সব অপতৎপরতা অচিরেই বন্ধ না হলে আইসিএসএফ তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যথাযথ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হবে। বলাই বাহুল্য, অত্যন্ত অনিচ্ছায় এবং নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপগুলো আমাদের নিতে হবে, যা আমাদের অত্যন্ত মূল্যবান সময়ের অপচয়েরও কারণ হতে পারে, যে সময়টি হয়তো আরও কার্যকরভাবে ব্যয় হতে পারতো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তামূলক আরও জরুরী কর্মকান্ডে যা আইসিএসএফ সবসময়ই করে এসেছে এবং করছে।
১৯৭১ এর চার দশক পর তরুণ প্রজন্মের মেধাভিত্তিক দ্বিতীয় এই মুক্তি সংগ্রামে আইসিএসএফ অন্যতম এক সামষ্টিক শক্তি। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং একে শক্ত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বুদ্ধিবৃত্তিক, ধারণাগত, মূল্যবোধগত এবং চেতনাগত এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আইসিএসএফ এর নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত। তাই আইসিএসএফ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শিবিরের সকলকে অটুট ঐক্য প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করে যাওয়ার, এবং যে কোন অনৈক্য-বিভেদ-সংঘাত-সন্দেহ সৃষ্টিকারী ষড়যন্ত্রমূলক উপাদানের (ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক পর্যায়ে) বিষয়ে সজাগ থাকবার আহ্বান জানাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রজন্মের এই দুর্বার আন্দোলন ১৯৭১ এর যুদ্ধাপরাধের বিচারকে তার কাঙ্খিত লক্ষে পৌঁছে দেবে একদিন, সে প্রত্যয় আমাদের আছে।
ধন্যবাদ।