১০ ডিসেম্বর ২০১৬, ঢাকাঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ) এর ভবিষ্যত বিচারিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সরকারের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, আইনি সংস্থা, বেসরকারি সংগঠন সহ সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মত দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ও একটিভিস্টরা। এক্ষেত্রে জাতীয়ভাবে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সে অনুযায়ীকার্যকর ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও তারা আরো মত দিয়েছেন। সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) আয়োজিত “রাষ্ট্রীয় আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের মডেলঃ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (বাংলাদেশ)-এর সংগ্রাম, অর্জন ও ভবিষ্যৎ” শীর্ষক সংলাপে এ মতামত উঠে আসে। এছাড়াও, যুদ্ধাপরাধ ও বিচার বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণা কাজে আরো মনোযোগ দিতে হবে, সাক্ষীদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন করতে হবে, ও তদন্তাধিন অভিযোগগুলোর মামলা চালানোর জন্য ট্রাইব্যুনাল এর সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষেও মত দেন তারা।
আজ থেকে চার দশক আগে একটা দেশ তার জন্মের সময় ভয়ংকর গণহত্যার মূল্যে যে স্বাধীনতা অর্জন করেই সে গণহত্যার বিচার চেয়েছে। ২০০৯ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে বহুল কাংখিত বিচার শুরুও হয়েছে এবং শিগগিরই এ প্রক্রিয়া সপ্তম বর্ষে পদার্পনও করতে যাচ্ছে। তাই ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবিক অপরাধের এ ঐতিহাসিক বিচার প্রক্রিয়া বহু দশকের সম্মিলিত আন্দোলন ও ত্যাগের ফসল। এ পর্যন্ত শত প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার পরও এখন মোট ২৭টি মামলার রায় দেয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটিকে আরও এগিয়ে নিতে ও প্রাপ্য মহিমার অবস্হানে নিয়ে যেতে, এবং এ প্রক্রিয়ার ফলাফলকে ন্যায়বিচারের ইতিহাসে যথাযথ মর্যাদার অবস্থানে অধিষ্ঠিত করতে এখনও অনেক পথ বাকি।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আইসিএসএফ এর পক্ষ থেকে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার শাহ আলি ফরহাদ। মূল বক্তব্যের উপর আলোচনায় অংশ নেন তদন্ত সংস্থা থেকে জনাব সানাউল হক, জনাব আব্দুর রাজ্জাক, এবং প্রসিকিউটরদের মধ্য থেকে এডভোকেট জিয়াদ আল-মালুম, এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট সুলতান মাহমুদ সিমন ও ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বাউল। এছাড়াও অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি জনাব মফিদুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিক ও অনলাইনে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী প্রচারণার সক্রিয় কর্মীসহ অন্যরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে একাত্তরে ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার ভিকটিমরা প্রায় ৪০ বছর পর বিচার পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখানেই বিষয়টি শেষ নয়। তারা সকলেই এ ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার বিষয়ে জোর দেন। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেও এই কাজটি করা যেতে পারে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার বলেও তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় ট্রাইব্যুনালের আইনজীবি, তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধি, অনলাইনের সক্রিয় কর্মী, সাংবাদিক সহ বিচারিক প্রক্রিয়া ও আন্দোলন সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতি ছাড়াও বিশ্বের আরও ২২ টি শহরের শতাধিক মানুষ সরাসরি ও প্রত্যক্ষ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিল।
আইসিএসএফ (ICSF) হল বিশেষজ্ঞ, সক্রিয় কর্মী, এবং বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যা আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারহীনতা নিরসন, ভিকটিমদের সুষ্ঠ বিচার নিশ্চিতকরণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে গত অর্ধ-যুগেরও বেশী সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে।